একজন নারীর বার্বি ডল হয়ে উঠা

লিখেছেন লিখেছেন Saidul Karim ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৭:২৩:১৮ সকাল

সুন্দরী স্ত্রী, আকর্ষনীয় কন্ঠ আর সুন্দর হাতের লিখা যাদের তাদের মন নাকি ভাল থাকে! হাতের লিখা সুন্দর করার জন্য উদ্দ্যোক্তাগণ কোচিং সেন্টার চালু করল আর মাল্টিন্যশনাল কোম্পানি বাজারজাত করল হরেক বর্ণ ও সাইজের কলম।কণ্ঠ সুন্দর করার জন্য কবিরাজগণ আবিষ্কার করল "কন্ঠ সুন্দর করার পথ্য"।মাসিক আদর্শ নারী নামক একটি পত্রিকায় কণ্ঠ সুন্দর করার ওষুধের বিজ্ঞাপন দেখে অট্টহাসি দিলেও পরবর্তীতে তাদের ফতওয়া শুনে আরেকবার হেসেছি।সেটি পরে সময় হলে বলব।

স্ত্রীদের সুন্দরী করার জন্য বাজারে আসলো "লাভলী পেস্ট আর সুন্দরের রহস্য আবিষ্কার করল লাক্স!" ক্লোজআপ পেস্ট শুনাল ফ্রেশনেসে অসাধারণ কাছে থাকার গল্প। "কাছে এসো,কাছে এসো, কাছে এসো না!"

মেয়েরা নিজেদের সুন্দরী দেখানোর জন্যও কম চেষ্টা করছেন না! ৫ ফুট লম্বা মেয়েটির ওজন হবে মাত্র ৩৫ কেজি! না হয় তাকে বার্বি ডলের মত লাগবে না।তাই সে ডাইট কন্ট্রোল শুরু করল।

টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটটিউট'র সামনে স্থাপন করা পেছনের বিশেষ অঙ্গ দৃশ্যমান জড় মূর্তি নিয়ে কত হৈ চৈ হচ্ছে অথচ প্রতিদিন আমি যে জীবিত মূর্তিটির পাশে বসবাস করছি তার দিকে একটু নজর দেয়া যেতে পারে।আর সেই জীবিত টি হল- আমার-আপনার বোন,অন্যজনের জাস্ট ফ্রেন্ড,একজনের নামকাওয়াস্তে প্রেমিকা,অন্যজনের হবু স্ত্রী।কেউ যদি ফ্যাশন করে আমাদের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়,নেইও।কিন্তু একে ইসলামী নামে নামকরণেই আমাদের আপত্তি। আমার বোনও হিজাব পড়ে! কালো বোরকা পরিধান করে। কিন্তু তারপরও টিচার্স ট্রেনিং এর সামনে থাকা মূর্তি'র সাথে তার সামান্য পার্থক্য হল- ঐ মুর্তিটি জড় কিন্তু লেংটা যার পেছনের বিশেষ অঙ্গ দেখা যাচ্ছে আর আমার বোনটি কালো ফিটিংস বোরকা পরিহিতা! যে বোরকার প্রচলন হয়েছিল একজন মুসলিম-মুমিন নারীর সৌন্দর্য গোপন রাখতে সেই বোরকা আজ হয়ে গেল নারীর সৌন্দর্য প্রকাশক।আফসোস!

মেয়েটি বড় হলে দেখতে কেমন হবে তা ঠিক করে দেয় বার্বি ডল! কি অদ্ভূত তাই না? পত্রিকার সূবাধে জানা যায়, অনেক মহিলা নিজেকে বার্বি ডলের আদলে আকর্ষনীয়া রুপে উপস্থাপন করার জন্য সার্জারি করাচ্ছে। বাজারেও এসেছে বিভিন্ন হলিউড আর বলিউডের নায়িকার প্রতিরুপে এই পুতুলগুলে। যেমন: ক্যাটরিনা,সানি লিওন, ঐশ্বরিয়া! আমাদের রুচিবোধকে কলুষিত করার অনেক কিছুই আছে।তবে পরিবর্তন যাই হোক না কেন- জানতে হবে কার স্বার্থে আমার এ পরিবর্তন? ভৌগিলিক জাতীয়তাবাদ আর ভাষাগত জাতীয়তাবাদিদের ক্ষেত্রে যেকোনো কিছু গ্রহণ/বর্জনে তেমন অসূবিধা হয় না।কিন্তু একজন মুসলিমকে কিছু গ্রহণ বর্জন/গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক দূরে দেখতে হয়।ভাবতে হয়- 'আমার গ্রহণ/বর্জনে আগত প্রজন্ম কী পরিণাম ভোগ করবে।'

১৯৫৯ সালে আমেরিকান Mattel Inc নামের একটি কোম্পানি এই বার্বি নামের পুতুল তৈরী শুরু করে।এর আবিষ্কারক রুথ হ্যান্ডলার নামক মহিলা তার মেয়ে 'বারবারা' এর নামে এই পুতুলের নাম করণ করেন- বার্বি! এই বার্বি ডল হল লম্বা-পাতলা ফর্সা বাচ্চা চেহেরার এক জড় মানবী! মোটা/স্থুল বার্বিও বাজারে আছে। উচ্চতা আর আকৃতিতে এসব ডল যদি বাস্তবে মেয়ে হতো তাদের ওজন কত হতো এমন প্রশ্নের উত্তর: ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা এসব ডলগুলোর ওজন হবে ৩৫ কেজি! একজন তরুণীর যে বয়সে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর খাবার দরকার সেই বয়সে সে শুরু করে দিয়েছে 'ডায়েট কন্ট্রোল'।উদ্দেশ্য লিকলিকে লম্বা,ফর্সা,পাতলা ঠৌঁট ও বাচ্চা চেহারার বার্বি ডল হওয়া।বাস্তবে একজন নারী ইচ্ছে করলেই বার্বি হতে পারে না কখনো। দৈহিক গঠন অনেকটা ভৌগলিক আবহাওয়া,পেশা ও অভ্যাসের ওপর নির্ভশীল।বাংলাদেশের মেয়েরা ইউরোপীয়ান/মিশরীয় মহিলার মত লম্বা হবে না।মন-মননে চাইনিজ-জাপানিজদের মত শান্ত হবে না। এদেশের মেয়েরা ৫ ফুটের কাছাকাছি লম্বা ও মাংসল হবে।মননে হবে চঞ্চল-আবেগী। শাড়িতে এদের দারুণ লাগে।তাই হয়তো এ দেশের মেয়েদের অন্যতম পছন্দ শাড়ি। যাইহোক আসলেই কি বারবির মতো হওয়া যায়?

"শিল্পী নিকোলাই ল্যাম প্রমাণ করেছেন, বারবির মতো হওয়া অসম্ভব। বারবির সঙ্গে তুলনা করার জন্য নিকোলাই বেছে নিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী তরুণীদের দেহাবয়ব। দুই মাসের গবেষণা শেষে এই শিল্পী দেখিয়েছেন, বারবি যদি সত্যি হতো, তাহলে তার উচ্চতা এত লম্বা হতো না। এ ছাড়া বারবির যা ওজন হতো তাতে করে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত অপুষ্টিজনিত রোগী হিসেবেও ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দিতেন। বারবি মাথার আকারও বেশ খানিকটা বড়, যা স্বাভাবিক একজন মানুষের হলে হাঁটা-চলায় ভারসাম্য রক্ষা হতো না। দুই পা এগোলেই উল্টে পড়তে হতো ধপাস করে! নিকোলাই বলছেন, ‘আমি দেখাতে চাই, তরুণীরা এমনিতেই অনেক সুন্দর। বারবি আসলে অবাস্তব।’'(প্রথম আলো আর্কাইভ,১৭ জুন ২০১৩)

এসব বার্বি ডল বাজারে আসার শুরুতে এর দাম ছিল মাত্র তিন ডলার। আজ এর দাম অনেক।বাংলাদেশি টাকায় তো হাজার থেকে শুরু! তথ্যমতে,উন্নত ও মধ্য আয়ের দেশে ৩ থেকে ১০ বছর বয়সী ৯০% মেয়েদের অন্তত একটি বার্বি ডল আছে। শুরুতে এই পুতুল তৈরী করা হতো শ্বেতাঙ্গদের গায়ের রঙ্গে।এ পর্যন্ত ৪০ ক্যাটাগরিতে এই পতুল তৈরী হয়। বোঝা যায়- এর বাজার কত বিশাল।পূঁজিবাদিদের দরকার লাভ,তা যেই পেশা-ব্যবসা হোক না কেন।এখানে নীতি-নৈতিকতার কোনো প্রশ্ন নেই। সমাজ,দেশ আর মানুষকে প্রতিনিয়ত গিনপিক বানিয়ে ব্যবসায়িক সমৃদ্ধিই তার কাজ। তাই "ধুমপানে" ক্যান্সার হয় জেনেও এটির উৎপাদন,বিপনন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ হয় না।

বার্বি ডল যখন একজন মানুষের শয্যাসঙ্গীনির স্থান দখল করে তখন কেমন লাগবে? কেউ যদি শয্যাসঙ্গীনি হিসেবে পুতুলকে ব্যবহার করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমরা ধরে নেব- আত্ম-মর্যাদাহীন ও বিকৃত রুচি সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে। জাহেলী যুগ সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত যে, "নব বধু যে ঘোড়ায় চড়ে স্বামির বাড়িতে আসত, সে ঘোড়াকে স্ত্রী নামার পরক্ষণেই স্বামী হত্যা করত!" কারণ, তখন স্বামী ভাবত, যে ঘোড়ায় চড়ে আমার স্ত্রী এসেছে সে ঘোড়ায় পর-পুরুষ বসা মানে আত্ম-মর্যাদাকে জলাঞ্জলী দেওয়া। অথচ আজ জাহেলী যুগ নেই,আমাদের দাবি আমরা একবিংশ শতাব্দীর মানুষ; যাদের স্বামীর পাশা-পাশি দু'চারটি ছেলে বন্ধু স্ত্রীর দরকার হয়! কোনো সম্ভ্রান্ত নারী-পুরুষ এটি মেনে নিতে পারে না। বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন নামে এসব হচ্ছে।সেক্স ডল,ওয়াইফ ডল,জাস্ট ফ্রেন্ড,বেস্ট ফ্রেন্ড,অনলি ফ্রেন্ড আর ক্লাস ফ্রেন্ডসহ আরো কত কি।

কিছুদিন আগে এই বার্বি ডলকে হিজাব পরিধান নিয়ে অনলাইনে কি কান্ডই না ঘটল।ভারত থেকে বন্যার পানিতে ভেসে হাতি যদি বাংলাদেশের দিকে আসে এমনি তার নাম হয়ে যায় 'বঙ্গবাহাদুর' আর কে না কে শখের পুতুলকে ওড়না পরিধান করে সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করলে হয়ে যায় 'হিজার্বি'! অথচ আজকে হিজাবের যে সেক্সুয়াল বিকৃতি তা শুরু হয়েছে সোস্যাল মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে ভাইরাল হওয়া হিজার্বী নামক ডলের মাধ্যমে।

বার্বিগুলো তৈরি হয় শিশু চেহারার আদলে।আর শারিরীক গঠনও সেইম।কেন? খেয়াল করলে বোঝা যাবে, মেক্সিমাম বার্বি পুতুলগুলোর মুখে এক ধরণের উৎকন্ঠা,ভয় আর ইমোশনাল অনুভূতির চাপ।এই বার্বিগুলো হাসে না।অথচ একটি বাচ্চার মুখে কখনো ভয় থাকার কথা নয়।বাচ্চারা হাসবে এটাই স্বভাবিক। খুব সূক্ষ্মভাবে যে আমাদেরকে ডি-মোরালাইজড করা হচ্ছে বিনোদনের নামে তা সহজেই অনুমেয়। এই ভাবুক,লাজুক আর অস্পষ্ট উৎকন্ঠায় নিমজ্জিত বার্বি ডল/পুতুলগুলো তৈরীর পেছনে যে ধারণাটি কাজ করেছে তা হলো- শিশু যৌন।এক ধরণের মানুষ আছে যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিশেষ করে ১১-১৪ বছরের শিশু-কিশোরদের সাথে জৈবিক চাহিদায় অভ্যস্ত।যাদেরকে Pedophilia নামে অভিহিত করা হয়। এদের চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে বার্বি ডলগুলোর দৈহিক গঠন দেওয়া হয়েছে- 'সেক্সুয়াল প্লাস শিশুর প্রতিচ্ছবি'! আজ এই বার্বি নিয়ে বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠেছে পতিতা পল্লী।

অধিকাংশ বার্বি অর্ধ নগ্ন কাপড়ে থাকে এবং চুলগুলো সোনালি। এর মাধ্যমে এই বার্তায় সাধরণত একজন নারীকে দেওয়া হয় যে "যৌন আবেদনময়ী আর নিখুঁত দেহয়বই একজন নারীর স্টান্ডার্টের মাপকাটি"।অথচ একজন নারী যৌন সর্বস্ব প্রাণী/ যন্ত্র নয়। তার একটি সুন্দর মন আছে, পছন্দ আছে, একটি আকর্ষণীয় চরিত্র আছে ও সুদূর প্রসারি একটি লক্ষ্য আছে।তার একটি ঐশী মূল্যবোধ আছে।একজন রমণী যখন সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় ও সামাজিক ইতিহ্য থেকে ডাইভার্ট হয় তখন তার সাথে সাথে একটি আগত জাতিও লাইনচ্যুত হয়,ভ্রষ্ট হয়ে পড়ে।তাই মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও স্কলারগণ জাতি সত্ত্বা রাক্ষার্থে নারীদেরকে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের বিরোদ্ধে সচেতন হতে পরামর্শ দেন।একজন পুরুষের নিখুঁত চরিত্র আর মানিষিকতা হয়তো সভ্যতাকে সৃজনশীল করে কিন্তু, একজন নারীর উন্নত মনন-চরিত্র সভ্যতার পতনকে রহিত করে।এটি আমার বন্ধুদেরকে একটি ইতিহাস বলার মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। মিশরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় একজন রমণী হাতেই এবং দানেই প্রতিষ্ঠিত।আজ আমরা মুসলানগণ নেতৃত্বের দিক থেকে দেউলিয়া।আমাদের মাঝে নেই সুলতান মাহমুদ আর সালাহ উদ্দীন আয়ুবী কিংবা তারিক বিন যিয়াদ।কিন্তু এখনো আছে সেই দানিবীর রমণীর প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানের আলয়,কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়।কিন্তু বার্বি আমদেরকে জানান দেয়- স্মরণীয় বরণীয় হতে বার্বির মত যৌন আবেদনময়ী হতে হবে।

বার্বি'র জন্মই মূলত নগ্নতাকে কেন্দ্র করে। এর আবিষ্কারক রুথ হ্যান্ডলার দেখলেন যে তার মেয়ে বারবারাহ পুতুল নিয়ে খেলার সময় একজন প্রাপ্ত বয়স্কের আচরণই করছে।তাই তাকে অসময়ে "পাকনা" করার জন্য মায়ের এ সৃষ্টি। সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংসে এ বার্বি ডল সম্পর্কে Ms Rahimi নামক একজন ইরানী মহিলা বলেন: "I think every Barbie doll is more harmful than an American missile," ( BBC,March-2002)

বার্বি যেমন নৈতিকতাকে ধ্বংস করছে তেমনি আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাও হরণ করতে পারে। বিভিন্ন ব্যক্তি/সংস্থা বার্বির দেহ অভ্যন্তরে সিসি ক্যামরা,সাউন্ড রেকর্ডার স্থাপনের মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তথ্য-চিত্র,অবস্থান,গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। আইএস বার্বির শরীরে বোমা ফিটিংস করে হামলা চালিয়েছে বহু আগেই।

লিখাটি আশা করি ভাল লেগেছে।তবও প্রয়োজনের জন্য আমার ফেইসবুক লিংক শিয়ার করলাম। http://www.facebook.com/H.SaidulKarim

বিষয়: বিবিধ

১২২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File